Monday, January 31, 2022
সম্পাদকীয় কলাম
মিছে দম্ভে দাম্ভিম মন তোর, সবই আসলে ভ্রান্ত। এই ধারণাটি বাউল আজাদের। কথাটির মূল ভাব পুরানো এবং বিজ্ঞানসম্মত। এর শৈল্পিক রূপ এটি।
মানুষের প্রাপ্তির শেষ নেই। শরীরবিজ্ঞান সমস্ত প্রাপ্তিকে এক নিমিষে নিঃশেষ করতে পারে। মানুষ ভ্রান্ত ধারণায় গড়ে তুলে জীবন। সে নিজেও জানে না, সে নিজেও বাউল। দেশে এবং বিদেশে জীবনের কথা যেখানে আলোচিত হয়, সেখানেই নিভৃতে উঠে আসে শাশ্বত বাউলকথা। প্রাচীন বাউলেরা একশত বছরের পুরাতন আধুনিক মানুষ। তারা আজও প্রাসঙ্গিক। তাঁদের প্রসঙ্গ নিয়েই আমরা আলোচনাচক্র করি। বছরের প্রথম মাসের সংখ্যাটি পড়লে আপনি বাউল ধারণাকেই কাব্যিক রূপে দেখতে পারেন। সংখ্যাটিতে যারা লিখেছেন, প্রত্যেকেই স্তরীভূত শুভেচ্ছা, ভালোবাসা ও প্রণাম।
জীবনদেবতার কাছে সকলের নিরাময় দীর্ঘায়ু কামনা করি।
শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা-সহ
জয় দেবনাথ
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
মনন স্রোত, ত্রিপুরা
Sunday, January 30, 2022
রূপন সুত্রধর
ভালোবাসার দোষ
দাঁড়ানোর হাজার দোষ,
ভালোবাসার ভুবনে।
লোভাতুর মন নারী-পুরুষে,
ভালোবাসার ছলনা প্রতিক্ষণ।
রাখেনা কথা কেউ কারো জীবনে
কেটে পরো কেটে পড়ার দিনক্ষণ।
টুপটাপ চুপচাপ সবাই কেটে পড়ে
ভালোবাসার অবহেলায় কেটে পড়া যায়।
কেউ কাউকে জানানোর প্রয়োজন নেই এতো তাড়া
অনিত্য সংসার জীবন ফুল ফলের মতো
শেষে ঝরে যায়।
দেবতার পূজা কারো হৃদয়ে স্থান পেলে
মহত্তম তোমার সমাজের জীবনে।
যেখানে জন্ম নেওয়াটাই উত্তম
তবুও সূর্যের কিরণের মত ঝরে মিশে যাও।
কারো জীবনে ভালোবাসায় দাঁড়ানো,
হাজার দোষ ই-সময়ের মৃত্যু ভালোবাসার ফাঁসিতে।
উর্মি সাহা
পরিবর্তন
আকাশগঙ্গার ওপারে যখনি ধ্রুব তারা জ্বলত
স্বস্তি নিত কিছু স্বপ্ন কেনা-বেঁচার হাট।
কৃষ্ণ নদীর পাথরে স্রোতের অঢেল আনাগোনায়
পূর্ণ হত কাঁখের কলসী,
রুদ্ধ মাটির বুক জড়িয়ে রাখত চির শ্যামলের বন্যা।
কিন্তু; সময়ের তালে সে খবর আজ প্রতিবন্ধি।
চোখ-কান বন্ধ করে দোহাই দিচ্ছে বিজ্ঞানের।
মাটির দেয়াল গুলিতে নানা আকারে ক্ষত।
আলপনার রং কালো হয়েছে;
বসেছে কংক্রিটের দেওয়ালে।
ছত্রাক বাসা বেঁধেছে মানুষের-
চেতনার মনিকোঠায়।
দিন-দুপুরে আগুন জ্বলছে মানুষে-মানুষে,
অপশান, হয় বিজ্ঞান নয় বিবর্তন!
কৃষ্ণেন্দু অধিকারী
হেডফোন
যা কিছু সঞ্চয় তার সবটাই তোলা থাক,
এপিঠ-ওপিঠ সমান ভাগে।
শুনেছি যার যেটুকু পাঠ তার পথ সেটুকুই।
আজকাল খোলা চোখেই দেখি
দুঃস্বপ্নের দেশ।
চওড়া বুকে আঁকা হয় দাগের পাশে দাগ,
ছবির পর ছবি।
নীল খামে পৌছে যায়
প্রয়োজনহীন শব্দকোষ,
পাতার পর পাতা।
স্বপ্নের ভেতর
তৈরি করা দুঃসাহসী চোখে,
দেখি নিরবে, সন্তর্পণে
আগা গোড়া সবটুকুই।
আসলে ওদের আর্তনাদ শোনা বারণ,
তাই কানে গুজেছি
স্বর ভাঙানো হেডফোন।
সৈকত মজুমদার
রূপান্তরিত
আমরা কথা না বলেই যখন
দিব্যি আছি তো আর খামাকা
কথা বলার কি প্রয়োজন।
তুমিও অনলাইন আমিও
গুড মর্ণিং থেকে নাইট,
কেবল কথা হয় না এখন
সেই আগেকার মত।
এভাবে চলতে চলতে একদিন
স্তব্ধ হয়ে যায় কিছু সম্পর্ক আর
অভিমান রূপান্তরিত হয় ব্লক লিস্টে।
চয়ন সাহা
শেষ গোধুলির চিঠি
এই যে তুমি রোজ রোজ একই পথে হেঁটে যাও,কই কখনোই তো ফিরে আসার কথা ভুলতে দেখিনি তোমায়!
আমি সমস্ত কোলাহল থেকে বেরিয়ে এসে সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে যখন ঘরের চৌকাঠ পার করি, তুমি তখন নিরুদ্দেশ। আমার নিলাম হয়ে যাওয়া শ্বাসবায়ু, দেউলিয়া করে গেছে আমায়। আমি তবুও তোমার ঘর ফেরার অপেক্ষা ভুলিনি। মখমলে বিছানায় যখন শীতল বাতাস বইছে আমি তখন মেঝের এক কোণে গরম নিঃশ্বাসে উষ্ণতা ছড়াই। এভাবেই আমার বসন্ত যায় অথচ আমার বাগান জুড়ে শুকনো পাতার স্তুপে আমি আমার যে সমাধি দেখতে পাই, সেই সমাধির উপর রাখার মতো একটা ফুল সৃষ্টির কাছে দাবি করতে পারিনি।প্রতিদিন নিয়ম করে ডাকপিয়ন আসে কিন্তু আমার নামে একটা খাম আসে না। আমার বুক জানালার ঘর জুড়ে তোমার পাঠানো কুয়াশারা এসে ভীড় করে রোজ কিন্তু শীতের কুয়াশায় তোমার পরশ আসেনি একদিনও।আমার চোখের সামনে অজস্র সমুদ্র স্রোত আমায় আহ্বান করে, হুঙকার দেয় কিন্তু আমি পিছু সরে যাবো বল যেই এক পা পেছনে নিলাম দেখি আমার পেছন থেকে থামিয়ে দেয় হিমালয়।
অতঃপর একদিন গোধূলির পর তুমি আমার চৌকাঠে এসে দাঁড়ালে,আমার ওষ্ঠাগত কোনো রা নেই সেদিন।শুধু আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা হাতের তালুতে লেখা;
বিতাড়িত না করেও যে তাড়িয়ে দেওয়া যায় তা তুমি অনুভব করলে আজ,আমি তা এগারো বছর ধরে অনুভব করে আসছি। অভিমান করতে পারো কিন্তু তবুও কাউকে ভালোবাসলে সেই ভালোবাসা ভুলে কখনো দূরে সরে যেও না।
গৌতম মজুমদার
মেরুদন্ড
মেরুদণ্ডটা সোজা রেখো বন্ধু
খুঁজিওনা বিক্রির পথ,
মেরুদণ্ডটা সোজা রেখে চলা
কত জনের আছে হিম্মত ?
গিরগিটির মত অনেকেই দেখি
শিরদাঁড়া করে বিক্রি,
মানুষের কথা ভাবেনাকো তারা
পালিতেছে নেতার ডিক্রি।
কুকুরের মত নত জানু হয়ে
পদ লেহন করে নিত্য,
আচরন দেখে ভুখা মানুষের
জ্বলে উঠে মহা পিত্ত।
মেরুদন্ড টা যদি থাকে সোজা
বিশ্বাস করে সবে,
শ্রদ্ধার আসনে বসিয়ে সবাই
মাথায় তুলিয়ে লবে ।
সৃজা ঘোষ
ধিক্কার
সবাই বলে ধৈর্য্য ধর
সময় ঠিকই আসবে,
দুঃখ কষ্ট লুকিয়ে রেখে
খুশী মতো হাসবে।
জগৎ মাঝে এসব নিয়ম
মেয়েদেরই সাজে,
মুখটা খুললেই সবাই বলে
ঐ মেয়েটি বাজে।
বুকের ভীতর আঘাত নিয়ে
সই যে অপমান,
নেইকো মোদের এই সমাজে
চোখের জলের দাম।
এই জগতে সবই আছে
অভাব শুধু শিক্ষার,
নরকের এই কীট গুলোকে
জানাই শুধু ধিক্কার।
লিটন শব্দকর
ডিটারজেন্ট
হাঁসের ডানায় শিশির মুছে ভোর পাঁচটা বেজে দশ
পরক্ষনেই ভাঙা খেয়ালে নামে মিঠেরোদের ধ্বস।
সে বুঝি আর হাসতে জানে না কাঁদতেও জানেনা
মানিয়ে মানিয়ে শহরের বুকে জমে যায় কুরে খায়
কেটে যায় প্রহর সারাবছর পাহাড়টা তো থাকেনা।
উপত্যকা স্নান করে রোদ পোহায় সার্ফের ফেনায়
একদিন কাপড় কেঁচে বুঝে ফেলি গুগলি রেসিপি
কি যে এক আনন্দে সমাগমস্থলে হঠাৎ উঠি গেয়ে-
-"পেহেলে ইস্তেমাল করে ফির বিসওয়াস করে ।"
আলমগীর কবির
মৃত্যু
আমরা প্রতিদিন, প্রতি মুহুর্ত, প্রতি ঘন্টা, প্রতি মিনিট, প্রতি সেকেন্ড মৃত্যুবরন করি।
শুধু আমরা নয় আমাদের আশে পাশে অগণিত প্রিয়জন মৃত্যুর দিকে চলে যায় আমাদের চোখের সামনেই।
আমরা একটুও ভাবিনা। গভীর ভাবেতো একদমই নয়! আমাদের দিকে চেয়ে থাকে আমাদের পিতা মাতা....
কত স্বপ্ন দেখে, কত কি কল্পনা করে সাজিয়ে রাখে আমাদের জীবন, শুধু অপেক্ষা করে কোনো এক মুহুর্তের!
ভরসাবিহীন অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে, আমাদের জীবন বেড়ে উঠার দিকে,
আর আমরা ফুর্তির ঘোড়ার পিঠে চড়ে ঘুরে বেড়াই।
কোথায় যাই, কেনো যাই কিছুই জানিনা
এদিকে শত ইচ্ছে, ভরসা, স্বপ্নের মৃত্যুর জন্য দায়ী আমরা!
এমন অসংখ্য মৃত্যু হয় আমাদের জন্য আমরা বুঝিনা
আমরা বুঝতে চাইনা,!
ভুলে গেছি আমরা লাশের স্তুপের উপর বাস করি!
দিন দিন এতো মৃত্যু হয় যে বাতাসে শুধু দুর্গন্ধ
কিন্তুু আমরা এমনভাবে হারিয়ে গেছি আমরা কোনো গন্ধ পাইনা!
সৈকত সরকার
লক্ষ্য যদি শক্তিশালী
লক্ষ্য যদি শক্তিশালী ভয় কিসে হয় বলো কাজে,
ভয় সেতো আর নেইতো কোথাও ভয় যতো সব মনের মাঝে।
গদবাধা এই ছকের ধাঁধায় ভুলছো তুমি ভাঙতে শেকল,
শ্রেষ্ঠ জীবের মুকুট মাথায় চেষ্টা তোমার কেনো বিকল?
সবকিছু তো সবার কাছে থাকবে সদা এমনটা নয়,
যে কলমে নাম লেখা যায় থাকলে সেটা তাহলেই হয়।
কোথায় তুমি হোঁচট খেলে কেইবা বললো তোমায় মন্দ,
সেসবে আর কি আসে যায় সবার গায়েই মাছের গন্ধ।
কি জানো আর কি জানো না চলতে চলতে পথ চেনা যায়,
হাজার জনের হাজার কথা শুনলে সেসব পথ চলা দ্বায়।
তোমার জীবন সাজাও তুমি বাগান যেমন সাজায় মালি,
হারলে পরে চেষ্টা আবার চেষ্টা যোগায় হাতের তালি।
ঠিক করো আজ ভবিষ্যৎটা নাকি কেবল অতীত হবে,
জীবন একটা যাত্রা শুধু এমনিতেও ফুরিয়ে যাবে।
সংগীত শীল
নিয়ম
সদ্যজাত শিশুটি মায়ের
ছেঁড়া আঁচলে মোড়া
আঁধার পেরিয়ে কিঞ্চিৎ,
খাবারের জন্য নিত্যদিন বেঁচে থাকা।
জীবন স্বপ্নের নদীর মতো,
দারিদ্র-নিপীড়িতদের যন্ত্রনার
ক্ষুধার্তের পেটে ওরা
ঈশ্বর নিয়তি মানে না!
পথের ধারে ময়লার সস্তা রুটি কিংবা
ছত্রাক জন্মানো পাউরুটি,
ক্ষুধা নিবারণের পথ বেছে নেয়
পৃথিবীর অদ্ভুত নিয়ম নির্মমতায় ঘেরা!
প্রীতম শীল
কবিতা নয় গল্প
বহু দিন পর ধুলো ঝেড়ে,
ডায়রি টা হাতে নিলাম।
একটি প্রেমের কবিতা লিখবো বলে।
একটা অসমাপ্ত প্রেম ছিলো,
তার জন্যই কবিতাটি,
যার মন কেড়ে নিয়েছিলো ছলে।
বললাম প্রথম প্রেম কিনা?
জবাবে বললো না।
এটি তার কাছে তৃতীয় প্রেম ছিলো।
আমি ডায়রিতে কলম রেখে,
উচ্চহাসি হাসলাম।
বললাম তবে সব তো বরাবরই হলো।
তুমি যে দুজনে কাছে আজ,
অসমাপ্ত গল্প হয়েছো।
বলতে পারো তারা কি দোষ করলো?
কিছুটা সময় মৌনভাবে থেকে,
তার পর একটা দীর্ঘশ্বাস।
বললো সত্যি তো হিসাবটা বরাবর।
বাড়ি যাও আর কবিতা নয়,
একটা গল্প ভেবে রেখো।
আমি এসে লিখবো এক যুগ পর।
কাজি নিনারা বেগম
উষ্ণতার আশ্রয়
মায়াবী ভোরের শীতের সকালে চায়ের কাপে থাকবে তুমি,
ক্লান্তি গুলো অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কনকনে হিমেল হাওয়ায় বেমালুম হেরে যাই আমি।
হিমেল কনকনে রাত্রি ছিনিয়ে নিল আগুনের জলন্ত লেলিহানে,,
হৃদয়ে স্পন্দন গতি বেড়ে যায় সমর্পন করি এক সমুদ্র ভালবাসার আঙিনায়।
শীতের কম্বলের আশ্রয়ে খুঁজে নেই তোমার লোমশ বুকের সৌরভ,,
অলিন্দে ও রক্তের শিরা ও উপশিরায় রক্ত তঞ্চন জমাট বেঁধে থাকা রক্ত কনিকায় তোমার নাম!
রূপালী মান্না
সবটা ভার্চুয়াল হয়না
তুমি যখন অভিমানী গলায় বলো
কেউ ভালোবাসেনা, কেউ না!
কেউ আমাকে বোঝেনি, কেউ না!
তীব্র অভিমান বুকে নিয়ে মদ খাও, কান্নাকাটি করো,
অসুস্থ হও, ঘুমাতে চাও,
তখন আমি নির্বাক! নিস্তব্ধ !
আমি জানি, তুমি প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাসী নও ।
কিন্তু প্রেম যে চিরকাল প্রেমীকে নিজের করেই পেতে চেয়েছে,
আমিই বা ব্যতিক্রম হতে পারলাম কই ?
আচ্ছা পলক !
মায়ের আদর কী ভার্চুয়াল হয় ?
মায়ের আঁচলে মুখ মুছে, দুস্টুমি করে, মায়ের কোলেই ঘুমিয়ে পড়ার শান্তি কী ফোনকল, চ্যাট বা ভিডিওকলে পাওয়া যায় ?
তাহলে প্রেম কীভাবে সম্ভব?
গতবছর যখন দীর্ঘদিন পর দেখা হয়েছিল,
ঘুঁচে গিয়েছিল সব দূরত্ব
মুছে গিয়েছিল সব অভিমান
মনে পরে তোমার ?
আবার সেদিন যখন
মাস দুয়েক পর দেখা হলো দুজনের,
চোখের ইশারায় কাছে ডাকলাম আমি ।
বাব্বা! কী অভিমান বাবুর ! হুঁ!
কিছুক্ষনের মধ্যেই বরফ গলে জল ।
প্ৰিয় , জল ফুটে বাষ্প হওয়ার আগে
দূরত্ব ঘুঁচিয়ে দিও
ভালোবাসলে কাছে আসা প্রয়োজন
প্রয়োজন হয় কাছে থাকারও।
বর্ষা দে
বৃদ্ধাশ্রম থেকে মায়ের চিঠি
খোকা, কেমন আছিস?
শোন তোর মা বলছি।
ব্যাস্ত নাকিরে তুই ?
সেই যে সেদিন বলে গেলি
খোকা তুই আসবি!
আর যে এলিনা?
ওহ! ব্যাস্ত আছিস?
তা একটা ফোন করে তো বলতে পারিস।
যদিও তুই এখন মস্ত বড় অফিসার,
আবার সাথে তোর এখন দাম্পত্যের সংসার সামলাতে হচ্ছে।
হয়তো তোর এখন ফোন করার সময়টাও হয়ে উঠছে না।
আচ্ছা যাই হোক,
জানিস খোকা তোর দেওয়া সেই সাদা শাড়ি টা প্রায় ছিড়েই গেছে।
খোকা এবার পুজোর ছুটিতে আমার জন্য একটা শাড়ি নিয়ে আসিস তো।
খোকা জানিস, প্রতিদিন চোখ খুলে দেখি একটা চিলতে ঘর, আর সাথে একটা ভাঙ্গাচুরা তক্তাপোশ।
আমার সাথে থাকা সন্ধ্যা দিকে বলেছি,
খোকা তোর নতুন বাড়িটা হলে আমাকে তুই নিয়ে যাবি।
আর থাকতে হবে না এখানে।
কিরে খোকা আসবি তো?
শোন আমি কিন্তু অপেক্ষায় থাকবো।
শুনেছি বৌমা নাকি সন্তান সম্ভবা।
তবে বাড়ি ফিরেই
তো আমি তোর সন্তান কে কোলে নিতে পারব।
সেই আনন্দ আর ধরে না।
কি বলবো!
আচ্ছা আজ এতোটুক পর্যন্তই লিখলাম।
তুই প্রশ্নগুলির জবাব দিস কিন্তু। সময় করে।
অপেক্ষায় থাকবো!
ইতি
............
খোকা তোর মা।
ঠিকানা:- বৃদ্ধাশ্রম।
ভালো থাকিস খোকা।
দীপক দাস
আত্মকথা
২১ শে নভেম্বর জীবনের সত্তরতম মাইলস্টোনটি স্পর্শ করলাম আর ২৮ নভেম্বর জীবনের নূতন এক অধ্যায় শুরু হল। শিক্ষকতার জীবন ছেড়ে রাজনীতির জীবন। সবার মত আমিও দেশকে ভালোবাসি এবং দেশ পরিচালনার পন্থা পদ্ধতি নিয়ে ভাবতাম ও সে অনুযায়ী নিজের বিশ্বাসকে ব্যক্ত করেছি তবে সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত ছিলামনা।দীর্ঘদিন নিশ্চিত জীবন কাটিয়ে মনে হচ্ছিল আমার কিছু করার ছিল কিছু করতে পারি এখনো এবং কিছু করা দরকার।তাই ২০১৮ তে অতি সক্রিয় হয়েছিলাম যার ফলশ্রুতিতে সাবরুম নগর পঞ্চায়েতে কাজ করার দায়িত্ব পেয়েছি।এক কবি বলেছিলেন " মানুষ বড় কাঁদছে/ মানুষের পাশে দাঁড়াও "।
আমি কাজ শুরু করতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছি তাতে আমি হতচকিত বিমূঢ়। এত কষ্টও আছে মানুষের? কই আগে তো এভাবে উপলব্ধি করিনি।শিক্ষিত ছেলের চোখের জল আমার চোখকেও সিক্ত করে দিচ্ছে।
নির্বাচনে অংশ গ্রহন করতে গিয়ে যারা বিশেষ করে যুব মোর্চার ছেলেরা,আমার ওয়ার্ডের বেশ কয়েকজন কার্যকর্তা, আমার সুহৃদ যেভাবে পরিশ্রম করেছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা নেই।এলাকার সকল জনগনকে আমার ধন্যবাদ।অনেক সুহৃদ যেভাবে আমার খোঁজ খবর নিয়েছেন ও নিচ্ছেন তাদের ভালোবাসায় আমি আপ্লুত। ভোটযুদ্ধ পরিচালনার সেনাপতিত্রয়কে অকৃত্রিম ভালোবাসা জানাচ্ছি।
এবার আমার কাজের পরীক্ষা। আমি তৈরি।সবার সহযোগিতা আমি কামনা করছি।
দিপিকা রায়
মনে পড়বে
নিশিথের স্বপন ঘিরে তোমার চোখে যখন
ঘুম জুড়াবে ,
হৃদয় বিদারক কন্ঠ সেদিন,
তোমার চোখ ভিজিয়ে দেবে।
একাকীত্বের শহরে তোমার
বুক ফাটানো চিৎকারে,
আমায় মনে করিয়ে দেবে।
খোলা আকাশে জোনাকির পথগুলো
যখন তোমার পায়ে
খুঁজবে আমায়,
সেদিন এবড়োখেবড়ো কাঁকড় গুলোও
আমার আর্তনাদে তোমার পথের বাধা হবে।
পিপাসার্ত কন্ঠ তোমার
ভিজবে চোখের জলে।
উর্ধ্বশ্বাসে বাড়ানো হাত দুটি,
অন্ধকারে খুঁজবে শুধু
আমার স্পর্শ।
সেদিন হয়তো আমার কথা
মনে করবে।
তোমার কপাল বেয়ে
ঘামের বিন্দু,
মনে করিয়ে দেবে
আমার সেই প্রথম চুম্বন।
সেদিন তোমার ভিটটাও
কম্পিত হবে ,
এক তীব্র যন্ত্রনায়।
তোমার পছন্দের শার্টে আমার কালো কেশের
ভিজা গন্ধটা যেদিন খুঁজে পাবে না,
সেদিন হয়তো একবার মনে
করবে,
কোনো পাগলীর পাগলামির কথা।
তোমার চায়ের কাপে
লিপস্টিকের চিহ্নটা একদিন
হন্যে হয়ে খুঁজবে।
তোমার খাবার প্লেটে
খাইয়ে দেওয়া হাতটা,
এখন আর তোমার ঠোঁটের কোনে
ভিড় করবে না।
ব্যস্ততার শহরে সময়ের দাড়ি পাল্লায়
তোমার কাছে আর কেউ অভিযোগ করবে না।
অভিমানে যেদিন তোমার চোখগুলো ঝাপসা হবে,
সেদিন হয়তো আমার কথা
একবার মনে করবে।
ঠিক মনে করবে।
বিনয় শীল
সম্বিৎ
বিশ্বজুড়ে ক্ষুধার জ্বালা
তৃষ্ণার় নাইরে জল।
তার উপরে ধর্মের নামে
চলছেরে কি ছল।।
পুড়ছি মারছি ভাঙছি যত
করছি রক্তে স্নান
ততবেশি শিউরে উঠছেন
খোদা ভগবান।।
উৎকট সব দৃশ্য দেখে
বিস্ময় চোখে থাকি।
স্নেহ-মায়া-প্রেম-প্রীতি সব
উবে গেল নাকি?
আজকে শুধু জাগছে প্রাণে
এই কথাটি যে।
নিজের বিচার নিজে করার
সময় এসেছে।।
শিক্ষক আমি, ধর্ম জ্ঞানী
কবি হতে পারি।
লেখক কিংবা সমাজসেবক
শাসন দন্ড ধারি।।
ব্যক্তিগত ভাবে আমি
যা বা যতটুকু।
তার চেয়েও বড় প্রশ্ন
মানুষ কতটুকু?
ধর্ম যদি মনুষ্যত্ব
হরণ করে হায়
সেই ধর্ম দিয়ে আমার
কিবা আসে যায়।।
শ্রীমান দাস
কৃষক বলো না আর
সুদীর্ঘ আবাদের পর
যে কৃষক বুঝলো না মাটির ধর্ম,
জমির অন্তরের বোবা ব্যথা...
তাকে কৃষক বলো না আর।
ছিনিয়ে নাও নাঙ্গল
শুকিয়ে দাও সেচনালা ,
মিথ্যে করে দাও
বৃষ্টিপাতের সকল পূর্বাভাস।
মাটির সাথে জমেনি প্রেম ,
শুধু দায়ে পড়ে মরসুমী দেখা...
এভাবে কি আবাদ হয় বলো !
যে কৃষক বোঝেনি কোনোদিন
মাটিরও হতে পারে অভিমান
একরোখা রাসায়নিক ব্যবহারে,
তাকে আর বীজ দিও না হাতে।
Saturday, January 29, 2022
মিঠুন দেবনাথ
আমি অন্ধ নই
আমি অন্ধ নই তবুও লাঠি নিয়ে চলি ,
আমি পাগল নই তবুও আবোল তাবোল বলি ,
আমি বোবা নই তবুও ইশারাতে চলি ,
আমি হুতুম নই তবুও নিশিরাতে খেলি |
আমি বীর নই তবুও স্পর্ধা নিয়ে হাঁকি ,
আমি পিশাচ নই তবুও লালচোখে ডাকি ,
আমি সত্য নই আমার পুরোটাই ফাঁকি ,
আমি আগন্তুক নই আমি মানুষের মাঝে থাকি |
আমার লাঠি আমার অলংকার ,
আমার বোল আমার অহংকার ,
আমার বীরত্ব আমার ঝংকার ,
আমার লালচোখ আমার হুঙ্কার |
অভীককুমার দে
একটি প্রেমের কবিতা
হৃদয়ের শব্দগুলো
ইট বালু সিমেন্ট জড়িয়ে
প্রাসাদ আমার
নিয়মিত নির্মাণ আলোয়...
সংসার সাজিয়ে কবিতা-
ভালোবাসে, জীবনের জীবিকাসুখ।
শৌভিক বাগচী
সুইসাইড নোট
আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয় , এই হ্রস্ব বাক্যে চির নিদ্রা কে বরণ করার পাত্র তাপস নয় | দীর্ঘায়িত পরিসরে মৃত্যুর অলিম্পন আঁকতে বসলো তাপস |
প্রথমেই মনে হলো , যে কাগজে সে লিখতে যাচ্ছে , তার গহীন ভাবনা , সেই কাগজটা বড়ো পাতলা | এ পৃষ্ঠার লেখা ফুটে বেরোবে তার অপর দিকে , ঠিক যেমন করে জীবনের অপর দিকে রয়ে গেছে হিমশীতল ঘুম | সে যেন ডাকছে , আয় আয় | সে ডাকে সাড়া দিতেই তার এই প্রস্তুতি | হয় তো এই লেখাটাই পরে নিলামে উঠবে কিংবা ঠাঁই পাবে সভ্যতার মিউজিয়াম এ |
কেন , তাপস কি বিখ্যাত লোক ? বিখ্যাত বৈকি | অতি অখ্যাত লোক যখন নিজের মূল্য চোকাতে হন্যে হয়ে ওঠে , তখন নিজের কাছে নিজেই সে বিখ্যাত হয়ে ওঠে | তাপস লিখলো , জন্ম ইস্তক সমূহ যুদ্ধ -বিগ্রহে আমায় এমন অস্ত্র শানাতে হয়েছে যে , বেঁচে থাকাটা আমার কাছে বিরাট ভাওঁতা মাত্র | বাবা যেদিন মা কে খিস্তি করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলো , সেদিন কি অস্ত্রে যুদ্ধ করেছিল তাপস , মনে আছে | টাকা দিতে পারেনি বলে , জন্মান্ধ বোনটাকে চিকিৎসার জন্য কোনো খরচই করতে হয় নি | সেদিন কোন অস্ত্রে যুদ্ধ করেছিল তাপস ? তাপসী কে কোনো গোপন মুহূর্তে চুমু খেয়ে তিক্ত স্বাদে ভরে উঠেছিল মুখ | সেদিন কোন অস্ত্রে যুদ্ধ করেছিল তাপস ? একাকী নীরবতায় আত্মরতি করতে গিয়ে মনে হয়েছিল, বিশ্বের তাবৎ নরম পুরুষের সঙ্গে দুর্বোধ্য কামে সংশ্লিষ্ট হয়ে যাচ্ছে সে | এই নীরব ভাবনার সময়ে , কোন অস্ত্রে যুদ্ধ করেছিল তাপস ?
বেঁচে থাকা তার কাছে তাই বিষময় | এই বিষ জ্বালার সঙ্গে অবিরত বিবমিষা হয় তার | বহিরঙ্গের তাপস আসলে গহীনের তাপসকে অতিক্রম করতে পারে নি | তাই মৃত্যুর তাপস হয়ে এবার ঘুমের বড়ি খেতে গেলো সে | কোথায় গেলো বড়ি গুলো , এখানেই তো রেখেছিলো | সর্বশরীর এতো জ্বালা করছে কেন ? শরীর এতো হালকা লাগে কেন ? বড়ি গুলো কই ?বড়ি পেলো না তাপস , শুধু জ্বালা নিয়ে এক তাপস আরেক তাপসকে বাতাসে ভাসিয়ে দিলো | লেখা হল না , আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী আমি নিজে | আসলে তাপস নামের মানুষটি হাওয়া হয়ে উড়ে গেছিলো আগেই , এখন পড়ে আছে তার স্কেলিটন শুধু |
অপাংশু দেবনাথ
কুহকবান
তুলে রাখি ঝড়োদিন, দু:খের গহনাবাক্সে,
অথচ তোমার চোখ শিশুটির ছায়াপথে।
দেবশিশুর অজানা,এচোখ দেখে কবেই
ঝরেছে রঞ্জিত পুষ্প। অশ্রুর তাবৎ দৃশ্যে
লেখা আছে মনছল। রকমারি জলঢেউ
খুঁজে নিতে যতো দেরি হবে বলে ভেবেছিলে,
হয়তো হয়েছে ঠিক,তবু সেই শিশুকেই
চিহ্নিত করে লিখবো একদিন, ফিরে যাও
পাহাড়ের খুব কাছে,ছবি তুলে রাখো ভোরে
ডুবে যাওয়া মায়ার নির্জন রূপ নির্মাণে।
শরীরে আমার এক শূন্যকোটোরা সাজাই,
কোনো এক ছাইরঙা মেঘ এসে জলঢেলে
পূর্ণ করে যাবে আর, একদিন মিশে যাবো একা
ডহরের কুন্ডলীতে সাধের কুহকবানে।
Subscribe to:
Posts (Atom)
উর্মি সাহা
মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...
-
আজ আশ্বিনের শেষ কার্তিকের শুরু এই দিনটা বিশেষ ভাবে বিশেষ, বাংলার এ প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্তে। জানি না বাংলার বাইরেও এইভাবে বিশেষ হয়ে উঠেছে কিন...
-
মূক ফেনীর মুখর পাঁচালি একটি বহুল প্রচারিত বাংলা প্রবাদ ‘ভাগের মা গঙ্গা পায়না’ ৷ প্রবাদটির মধ্য দিয়ে মায়ের অসহায়ত্বের যন্ত্রণাটিই ব্যক্ত হয়ে...