Monday, November 29, 2021

দুলাল চক্রবর্তী

সাবরুম এর সাংস্কৃতিক জগৎ


সাবরুম এর সাংস্কৃতিক জগতে পথপ্রদর্শক হিসেবে যার নাম করতে হয় তিনি হলেন স্বর্গীয় নিতাই বড়ুয়া। কর্মজীবনে উনি শিক্ষা দপ্তরের একজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ছিলেন। আমি যখন সাবরুম জে , বি ,স্কুলে চতুর্থ/পঞ্চম শ্রেণীতে পড়াশোনা করি তখন স্কুলে ব্রতচারী নৃত্য শেখানোর জন্য একজন প্রশিক্ষক এসেছিলেন, তার সাথে আমরা নিতাই দার সান্নিধ্য পেয়ে ছিলাম।১৯৬৪/
৬৫ সনের কথা । নিঃসন্তান নিতাই দা শিশুদের মধ্যে সাংস্কৃতিক জগতে ডুবে থাকতেন। তিনি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের
প্রসার কল্পে ছোটদের জন্য একটা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করলেন। যার নাম "সুর ছন্দ নৃত্য সংস্থা" । সাবরুম শহরের বর্তমানে জেতবন বৌদ্ধবিহারের পাশে
প্রতিষ্ঠানটা স্থাপিত হয় । ধীরে ধীরে শিশুরা এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে ভর্তি হতে লাগলো। প্রতি বৎসর যেকোনো সরকারি অনুষ্ঠানে এই সংস্থার ঢাক আসতো। নিতাই দা- ও উৎসাহিত হয়ে শিশুদের নিয়ে গান, নৃত্য ও অন্যান্য অনুষ্ঠান করেছেন। জয় করেছেন সাবরুম শহরের আপামর জনসাধারণের মন। লোক - সংস্কৃতির বিভিন্ন নৃত্য তিনি করাতেন। এর মধ্যে প্রধান ছিল ধামাইল নৃত্য ইত্যাদি। কোথায় পোশাক-আশাক,
কোথায় টাকা পয়সা--কিভাবে যে ব্যবস্থা করতেন, না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। 
উনার সাথে পরবর্তীতে এই সংস্থায় যুক্ত হন স্বর্গীয় অরুন নন্দী। গানের ভালো গলা ছিল। ও মূলত ছাত্র-ছাত্রীদের গান শেখাতো। নৃত্যের জন্য নিতাই দা নিজেই প্রশিক্ষণ দিতেন। পরে এর পরিসর যখন আরো ব্যাপ্তি লাভ করলো, তখন অনেকেই এই প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হলেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বেঁচে আছেন, কেউ মারা গেছেন। বর্তমানে সঠিক দায়িত্ববান ব্যক্তির অভাবে প্রতিষ্ঠানটি অনাদরে আছে।
পাশাপাশি, পরবর্তী সময়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিলেন স্বর্গীয় সুভাষ দাস মহাশয়। কর্মজীবনে উনি শিক্ষা দপ্তরের অধীনে প্রাথমিক স্তরের একজন প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তবলা, গান, নৃত্য এই তিন বিভাগেই সুভাষদা অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পরিসর বাড়াতে তিনিও স্থাপন করেন "সংগীতা "
নামে একটা স্কুল। সাবরুম এর অনেক ছেলে মেয়েরা এই প্রতিষ্ঠান থেকে নৃত্য, গীত ও তবলা শিখে সমৃদ্ধ হয়েছে। সরকারি/বেসরকারি বহু অনুষ্ঠানে তার শিল্পীরা অংশ নিয়েছে । তিনি একজন দক্ষ প্রশিক্ষক ছিলেন। সাবরুম এর বাইরেও তিনি সুনামের সঙ্গে অনেক অনুষ্ঠান করেছেন। প্রতিযোগিতামূলক অনেক অনুষ্ঠানে তার ছাত্র ছাত্রীরা সম্মানিত হয়েছে। সাবরুম এর আনন্দ পাড়ায় তাঁর এই প্রতিষ্ঠানটি স্থাপিত হয়েছে। এছাড়াও আরো অনেকেই ছিলেন তাঁদের নাম ও উল্লেখ করতে হয় রঞ্জু রায়চৌধুরী, প্রণব মজুমদার, প্রণব বসাক, সুবীর ভট্টাচার্য--আরো অনেকে ।
এদের মধ্যে অনেকেই আবার যাত্রা/
নাটক ইত্যাদিতেও অংশগ্রহণ করতেন। আজও সেটা ছবির মত চোখের সামনে ভাসছে। এইসব গুণীজনদের দাক্ষিণ্যে
আজ একটা সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল এই শহরে গড়ে উঠেছে। কিন্তু বর্তমানে প্রকৃত তত্ত্বাবধায়কের অভাবে এই কর্মকাণ্ড যেন কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছে।

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...