আলুবীজ
আজ সকাল ১০ টা ৩০ এর দিকে বাড়ির যাবতীয় কাজ সেরে নিয়ে ছাদে বসে আলুবীজ কাটছিলাম।
শশুরমশাই এসে বলে গেলেন - চোখে চোখে কাটবে। চোখে চোখে কথার অর্থ হলো প্রতিটা কল অনুযায়ী পিস পিস করতে।
প্রতিটি চোখে চোখে আলুবীজ কাটতে কাটতে মানুষের জীবনের সাথে এর অসাধারণ মিল পেলাম। কিছু ভাবনা মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো। সঙ্গে সঙ্গে নিচ থেকে খাতা পেনটা আনলাম। নইলে ভুলে যাবো।
ছোট্ট ছোট্ট আলুবীজগুলোর গা ভর্তি স্বপ্ন অর্থাৎ কল। প্রতিটি কলকে আমি টুকরো টুকরো করে দিচ্ছি যেভাবে একজন মানুষের স্বপ্নকে তার পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি টুকরো টুকরো করে দেয়। কারণ ফসল ফলাতে গেলে যেমন আলুবীজটাকে টুকরো টুকরো হতে হবে তেমনি স্বপ্নটা পরিপূর্ন করতে গেলে ব্যক্তিকে আঘাতে আঘাতে খাঁটি, পরিশুদ্ধ হতে হয়।
টুকরো আলুবীজগুলো কে নিয়ে চাষী জমিকে চাষযোগ্য করে চাষ করে। আড়াই থেকে তিন মাস জল, সার, চাপান, আগাছানাশক, প্রয়োজনীয় শ্রমিক ব্যয় করে একটা পূর্ণাঙ্গ আলুগাছে পরিণত করে। ঠিক যেরকম আমাদের স্বপ্নের পিছনে আমরা প্রয়োজনীয় শ্রম, অর্থ, সময় দিয়ে থাকি আরকি ! বারবার ভেঙে পরেও যেমন উঠে দাঁড়ায়।
আলুগাছটিতে আলু ধরার ঠিক আগের মুহূর্তে যদি জেদি কোনো নিম্নচাপ এসে তছনছ করে দেয়, তাহলে ?
তাহলে দাদন নিয়ে আলুচাষ করা চাষী অনেক সময় আত্মহত্যা করে , এ খবর আমরা খবরের কাগজে বহুবার পড়েছি ।
একটা আড়াই মাসের ফসলকে কেন্দ্র করে যদি চাষীর জীবন দুর্বিসহ হয়ে ওঠে , তাহলে সেই ছোট্ট থেকে স্বপ্নবীজ বপন করে আসা ছেলেটার বা মেয়েটার মনের অবস্থা ঠিক কী হয় বুঝতে পারো তোমরা ?
No comments:
Post a Comment