Saturday, May 26, 2018

সঞ্জীব দে

রবীন্দ্রনাথের আরেক নাম ভাবনার সাগর -
       
        "ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা
        ওরে সবুজ ওরে অবুজ, আধমরাদের ঘা মেরে তুই
         বাঁচা ।"
                        --------------রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর  
       
        সেই সুপ্রাচীন কাল থেকে আমরা ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে দেখতে পাবো সমাজের উত্থান-পতনের ক্ষেত্রে দু'টি অনুভব কাজ করছে। এক ধরণের শুভ অনুভব রয়েছে যা সমাজকে উন্নতির সোপান বেয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আবার আর এক ধরণের তীব্র অশুভ অনুভব রয়েছে যা সমাজকে পেছনের অন্ধকারের দিকে গতিমুখ ফেরানোর চেষ্টা করছেন। যদিও অশুভ অনুভবগুলি ধ্বংসের মুখে একদিন নিদারুণভাবে নিঃশেষ হয়ে যার কিন্তু শুভ অনুভবগুলি শেষ পর্যন্ত চিরন্ত সবুজতা লাভ করে অমরত্বের অধিকারি হয় সৃষ্টির পথ ধরে। দেশের সেরা সম্পদ হচ্ছে যুব শক্তি। এই শক্তি যদি বিপথগামী হয় তা হলে দেশ ও দশের বিপদ। যুব শক্তিই পারে দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার অতিক্রম করে সমস্ত অসাধ্যকে সাধন করতে। তাই যে বা যাঁরা দেশের কাণ্ডারী তাদের উচিত যুব শক্তিকে ন্যায়ের পথে পরিচালনা করা। যুব সমাজই পারে উন্নত শিরে সমস্ত অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে বিজয় মাল্য পরতে। চির যুবক কবিগুরু ছিলেন সেই শুভ অনুভবের মাঝে উজ্জ্বল ভাস্কর। তাই তো গুরুদেব বলেছেন মানুষের বিপদে উঠে দাড়াতে -- বিপদে মোরে রক্ষা করো এই নহে মোর প্রার্থনা
                বিপদে যেন নাহি করি ভয় ----
        সংগীত,শিল্প ,কবিতা নৃত্য এরা মিলে আনে আত্মার পূর্ণ সৌকর্য । কবিগুরুর এই --সবগুলি গুনই বিদ্যমান ছিল। তাই তিনি যুবক যুবতী সহ সবাইকে মনের সংকীর্ণতা বর্জন করে আত্মার পরিপূর্ণ সৌকর্যের দ্বারা মানুষের কল্যালে আঠারোর উত্তাপকে বিপদ মুক্ত করে দেশ সেবায় নিজেকে প্রস্তুত করে তোলা। কবিগুরু শুধু যুবকদের বলেননি তিনি তাঁর সাহিত্য মঞ্চে দুনিয়ার সুক্ষাতি সুক্ষ এমন কিছু তার দৃষ্টির অগোচরে ছিলনা যা উপস্থাপন করেন নি। তাঁর সাহিত্য বীনার মধুর সুরে বিশ্ব হৃদয় মোহিত ও প্রাবিত । তাঁর সঞ্চয়িতাকে আমি মনে করি প্রত্যেক মানুষের জীবনের একটি মনস্তাত্বিক ঔষধ।  ভাবনা প্রকাশের যতগুলি মাধ্যম রয়েছে গুরুদেবের এমন কোন মাধ্যম নেই যার মধ্যে তাঁর পদচারণা নেই। অংকন, সংগীত, নৃত্য, বিজ্ঞান, ক্ষিতি অপ তেজ মরুত ব্যোম, ব্রহ্ম মঙ্গল সহ সব সব ক্ষেত্রে ছিল তাঁর  অবাধ বিচরণ । রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবনের 12 বছর অংকন শিল্পে ব্যস্ত ছিলেন। 400 ছবি নিয়ে ইংল্যান্ড আর্ট প্রদর্শনী তে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। সংগীতে কবি একাই অর্ধেক আকাশ দখল করে আছেন। কবিগুরু সংগীত যেমন রচনা করেছেন তেমনি সুর, তালও সৃষ্টি করেছেন সম্পূর্ণ নিজস্ব ভঙ্গীতে। যেমন, "নিবিড় ঘন আধারে জ্বলিছে ধ্রুবতারা....... " রবীন্দ্র সৃষ্টতাল -- নবতাল =মাত্রা -9 ,বিভাগ -4. ছন্দ--3/2/2/2
                          ঠেকা
     ৩                  ২               ২              ২
ধা দেন তা / তিট কতা /গদি গনে /ধাগে তেটে / ধা

আবার ৫/4 ছন্দে গান রচনা করেছেন -"ব্যাকুল বকুলের ফুলে ভ্রমর মরে পথ ভুলে....... "
                   ঠেকা
        ৫                                  ৪          
      ধা ধি না ধি না / ধা  ধি ধি  নানা /
অন্যদিকে তিনি ষষ্ঠী, একটানা ছন্দ, রূপক, রূপকড়া, ঝম্পক, অর্দ্ধঝাপ, সহ চতুর্মাত্রিক তালে ও গান রচনা করেছেন - সবারে করি আহ্বান..... গানটিকে তিনি চতুর্মাত্রিক তালে বেধেছেন। তিনি তবলায় ঠেকা দিয়েছেন -ধা ধিন /নানা কতা/ ধা।

       এই ভাবে কবিগুরু নিজেকে প্রকাশ করতে করতে সাহিত্য সমুদ্রে নিজেই আরেক সমুদ্র হয়ে বসে আছেন উজ্জ্বল আসনে। এক সময় তিনি স্বরচিত গান ধরলেন নিজের সৃষ্টি "ষষ্ঠী" তালের উপর --" হৃদয় আমার প্রকাশ হলো অনন্ত আকাশে ---"
        সত্যিই তো তার বিশাল সাহিত্যের ভান্ডার এই এক বিশ্ময়। আবার তিনি কখনো বলে উঠেন মুক্ত হৃদয়ে --এসো হে আর্য, এসো অনার্য, হিন্দু -মুসলমান,
এসো এসো আজ তুমি ইংরাজ ,এসো এসো খৃষ্টান,।
এসো ব্রাহ্মণ শুচি করি মন, ধরো হাত সবাকার।

    কত বড় মানবিক গুনসম্পন্ন হলে,কত বড় হৃদয় হলে এত বড় মানবিক আহ্বান করতে পারেন সবার প্রাণের কবি বিশ্বকবি এই গানটি তারই জলন্ত প্রমান।
        আবার কখনো কবিকে বলতে শুনা যায় ধর্মের বিকৃতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে, এক চিঠিতে তিনি লেখেন " শস্তায় পাপমোচন ও পুন্যফল পাবার হাজার হাজার কৃত্রিম উপায় যে দেশের পঞ্জিকায় ও ভাটপাড়ার বিধানে অজস্র মেলে সে দেশের বীর্য্য সাধ্য সত্য সাধ্য ত্যাগ সাধ্য বুদ্ধি সাধ্য ধর্ম সাধনা বিকৃত না হয়ে থাকতেই পারে না "।
        প্রয়োজনে তিনি কলম ছেড়ে বঙ্গভঙ্গের সময় সবাই কে একসূতায় বাধার অঙ্গিকার বদ্ধ হয়েছেন আবার দেখা গেছে যুদ্ধের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাতে। 

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...