Saturday, May 26, 2018

বিনয় শীল

সরবশূন্য স্বীকারোক্তি

বাবা-মা, আমার প্রণাম নিও |
সেই কবেই পৃথিবীতে-
তোমাদের অন্ন-জল ফুরিয়েছে |
জীবন সায়াহ্ন্যে -
সবকিছু শেষ করে চলে গেলে |
সেই দুঃসময়ের ঘন অমানিশা
আজ বহুবিধ চোরাগলি পথে-
কপট কসরতে ,
স্ব-অর্জিত বিচিত্র সুখের-
প্রখর রশ্মিছটায় -
একেবারেই বিলীন |
আজ আমার মাথার উপর
সুখ জ্যোৎস্নার -
শীতল শুভ্র রজত-কণার
অবিশ্রান্ত ধারা |

বাবা, তুমি তিন 'স'-এর অর্থকে
জীবনসঙ্গী করতে বলেছিলে না ?
সততা, সরলতা, সমরসতা-
এদেরকে পরমাত্মীয়
করতে বলেছিলে না ?
কিছু মনে করো না বাবা,
আমি তোমার সেই বস্তাপচা
উপদেশ পালনে -
অক্ষম হয়েছি |
উপরিউক্ত তিন জনকেই
আমার জীবন থেকে
ঝাঁটা পিটিয়ে বিতাড়িত করেছি |

সগৌরবে বলতে পারি,
আজ আমি তিন 'ম' দ্বারা
সমৃদ্ধ |
'ম্যান পাওয়ার'- অবশ্যই আমার সমভাবাপন্ন |
'মাসুল পাওয়ার'- অবশ্যই আসুরিক শক্তি সম্পন্ন |
'মানি পাওয়ার'- অবশ্যই কুটিীল-কপট পথে লব্ধ |

আমি তোমার মত নির্বুদ্ধিতার
পরিচয় দেয় নাই |
দুবৃত্তের লাস্ট্ প্যাভেলিয়ন-
বলতে যা বোঝায় ,
তার কর্ণধারগণ-
আমার হাতের মুঠোয় |
আদায় করেছি -
উপার্জনের স্বীকৃত পথ |
কিন্তু বাবা, এই স্বল্প কালের মধ্যে যা করেছি-
তা ঐ স্বীকৃত পথে -
উপার্জনের অর্থে অসম্ভব !!

আমার চাল-চলনে চমক রাখি,
আমার কথা বলনে ধমক রাখি |
শঠতা-কপটতা-লোভ-লালস- আমার প্রিয়জন |
এরাই আমাকে পৌঁছে দিয়েছে
সকলের মাথার উপর-
অনধিকার চর্চার আসনে |

কতো জনার কতো নায্যপ্রাপ্য
প্রবঞ্চক নীতিতে আত্মসাৎ করেছি,
কতোজনার কতো সম্পদ
দুচ্ছেধ্য কুটজালে করায়ত্ব করে-
স্বীয় বিত্তকোষ পুষ্ট করেছি |
কার সাধ্য তা ধরতে পারে ?

আজ দীপাবলি |
আমার বাড়ীতে আলোর বন্যা |
মাছ-মানি-মদ-মহিলা-মাংস
এই পঞ্চ 'ম' কারের-
উষ্ণ আয়োজন |
চোখ ধাঁধাঁনো আলোর মালায়
জিগজ্যাগ করা ,
তোমাদের স্মৃতিসৌধের-
সম্মুখে আমি দণ্ডায়মান |
ভাবছি, আজ যদি-
তোমরা বেঁচে থাকতে ,
আসুরিক শক্তির-
ঐশ্বর্য ও উল্লম্ফন দেখে
স্তম্ভিত হতে !!

তোমার বৌমার মনটা দুর্বল |
সে আমাকে বলে- "কীগো, আমার ভয় লাগছে" |
জিজ্ঞাসা করলাম - কেন ?
উত্তরে বললো- "সব কিছুতে কেমন জানি বাড়-বড়ন্ত হচ্ছে না ? শুনেছি অতির পশ্চাতে না কী ইতি 'র ও আগমন ঘটে ?"
তাকে বললাম- "বাজে কথায় কর্ণপাত করো না |
ক্লীবতার পরিচয় দিও না |
দুর্বলতা পরিহার করো |
আমি কাঁচা মাছ খাই না,
কাঁচা কাজও করি না |
গুপ্ত কাজের তীক্ষ্ণ সূত্রে
নিপূণ না হলে -
উপার্জন আর জীবন শৈলীর
উদযাপনের মধ্যে-
আস্মান-জমিন ফারাক্
কী করে সম্ভব ?
তাও কী বুঝো না ?

তবে বাবা, একটি কথা
মনে আনতে চাই না |
তবুও অনাহুত কথাটা-
আজকাল মনের কোনে
উঁকি-ঝুঁকি দেয় বার বার |
আর সেটা হল-সব কিছুরই না কী শেষ থাকে ?
কখনও কখনও সে 'শেষ'- না কী-
চরম ভয়ংকর আবহ রচনা করে  !

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...