Saturday, May 26, 2018

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

দক্ষিণ ত্রিপুরার লিটল ম্যাগাজিন চর্চার ইতিহাস --



  লিটল  ম্যাগাজিন আধুনিক সময়কালের সাহিত্য আন্দোলনের এক তেজস্বী ধারা ৷ এর উৎস নিহিত রয়েছে বাংলা সাময়িকপত্রের প্রবহমান ইতিহাসের বুকে ৷ সে কারণে বাংলা সাময়িকপত্রের ইতিহাসকে বাদ দিয়ে বাংলা লিটল ম্যাগাজিনের ইতিহাস রচনার প্রয়াস অসম্পূর্ণ থেকে যায় ৷ সে হিসেবে ' দিগদর্শন' কে পর্থম বাংলা সাময়িকপতের হিসেবে ধরে নেওয়া যায় ৷ শ্রীরামপুর মিশনের উদ্যোগে শ্রীরামপুর থেকে 1818 সালের এপ্রিল মাসে প্রথম এই সাময়িকপত্রটি প্রকাশিত হয়েছিল ৷ এর সম্পাদক ছিলেন জন ক্লার্ক মার্শম্যান ৷ চার পৃষ্ঠার এই সাময়িকপত্রটি বাংলা- ইংরেজি দ্বিভাষিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশ পেয়েছিল ৷ বাঙালি সম্পাদক কর্তৃক প্রথম প্রকাশিত সংবাদপত্র হল ' বেঙ্গল গেজেট' ৷ এটি প্রকাশিত হয় 1225 বঙ্গাব্দ ৷1818 সালের মে মাসে শ্রীরামপুর মিশনারিদের দ্বারা প্রকাশিত প্রথম বাংলা সাপ্তাহিক ' সমাচার দর্পণের প্রায় সমসাময়িক  সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসেবে বেঙ্গল গেজেট প্রকাশিত হয় ৷ সম্পাদক ছিলেন গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য ৷ এখন পর্যন্ত  বেঙ্গল গেজেট এর কোনো সংখ্যা পাওয়া যায় নি ৷ ফলে এটির সঠিক প্রকাশকাল জানাযায় না ৷ 14 মে1818 প্রকাশিত বেঙ্গল গেজেট- এর একটি বিজ্ঞাপন থেকে জানা যায় যে এই সাপ্তাহিকটি ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে ৷ প্রথম প্রকাশিত এই পত্রিকাট সম্ভবত এক বৎসরকাল স্থায়ী হয়েছিল ৷ শ্রারামপুর মিশন থেকে প্রকাশিত জন ক্লার্ক মার্শম্যান সম্পাদিত বাংলাভাষার প্রথম সাপ্তাহিক সংবাদপত্র হল ' সমাচার দর্পণ' ( 1818-1852) ৷
ব্যতিক্রমী চিন্তাধারার সাহিত্য আন্দোলনকে মুদ্রিত আকারে রূপ দেওয়ার লক্ষে সৃষ্টি হয়েছে লিটল ম্যাগাজিন ভাবনা ৷ উনিশ শতকের প্রথমার্ধ থেকে ইউরোপ- আমেরিকায় লিটল ম্যাগাজিনের সূত্রপাত ঘটে ৷ Ralph Waldo Emarson  ও Margaret Fuller সম্পাদিত The Dial ( Boston,1840-1844)  এর মাধ্যমে ৷ Emarson এর নব্য দর্শন Transendentalism- এর যাঁরা অনুসারী তাঁরাই Dial ম্যাগাজিনে লিখতেন ৷ লিটল ম্যাগাজিনের প্রথম দিকের আর একটি পত্রিকা ছিল ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত 'Savoy' ৷  ভিক্টোরিয়ান পুঁজিবাদী ব্যবস্থা বিরুদ্ধে সোচ্চার উদারপন্থী ও সাম্যবাদী লেখকদের প্রধান মাধ্যম ছিল লিটল ম্যাগাজিন ৷ সাহিত্যক্ষেত্রে বিশ শতকের শুরুর দিকের সবচাইতে মূল্যবান লিটল ম্যাগাজিন ছিল Poetry:  A Magazine Of Verse (  Chicago-1912) ৷ এই পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন হেরিয়েট মুনরো এবং এজরা পাউন্ড ৷
পশ্চিমা ধারায় বাংলাদেশে প্রথম লিটল ম্যাগাজিনের স্রষ্টা প্রমথ চৌধুরী ৷ তাঁ সম্পাদিত ' সবুজপত্র' ( 1914)  - কে  বাংলা আধুনিক লিটল ম্যাগাজিনের প্রথম ফলক হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ৷ অবশ্য এ  নিয়ে দ্বিমতও রয়েছে ৷ অনেক সাহিত্য আলোচক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ' বঙ্গদর্শন' 1872) - কে বাংলাভাষার প্রথম লিটল ম্যাগাজিন হিসেবে দাবি করেন ৷ পরবর্তীকালে কল্লোল ( 1923) , শনিবারের চিঠি ( 1924) , কালিকলম ( 1927) , প্রগতি ( 1927) , পূর্বাশা ( 1932)  এবং কবিতা ( 1935)  ইত্যাদি লিটল ম্যাগাজিন প্রবাহে গতিসঞ্চার করে ৷
উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ত্রিপুরা থেকে ' ত্রিপুরা জ্ঞান প্রসারিণী' নামে একটি মাসিক সাময়িকপত্র প্রকাশিত হয় ৷ তবে এই পত্রিকাসহ পরবর্তী সময়ের বেশ কিছুটা কাল পত্রিকা প্রকাশের পিছনে রাজন্য পৃষ্ঠপোষকতা ছিল ৷ এমনি করেই মহারাজা বীরচন্দ্র মাণিক্যের আমলে রাধারমণ ঘোষের সম্পাদনায় ' বার্ষিকী' ( 1876)  নামে একটি সাহিত্যপত্র প্রকাশিত হয় ৷ মহারাজা রাধাকিশোর মাণিক্যের আমলে  হাতে লেখা ' পঞ্চপন্ডিত' নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয় ৷ তারপর মহারাজকুমার মহেন্দ্রচন্দ্র দেববর্মার সম্পাদনায় ' ধূমকেতু' ( 1903) , সুরেন্দ্র দেববর্মা সম্পাদিত ' বঙ্গভাষা' 1903) , চন্দ্রোদয় বিদ্যাবিনোদের সম্পাদনায় 'অরুণ' ( 1905) ,  ভূপেন্দ্রচন্দ্র সেন সম্পাদিত ' সাধনা' ( 1912)  ভারতচন্দ্র দেববর্মা সম্পাদিত ' শিক্ষণ' ( 1912)  ইত্যাদি সাময়িকপত্র প্রকাশিত হয় ৷ 1924 সালে মহারাজকুমার নরেন্দ্রকিশোর দেববর্মণ সম্পাদিত ' রবি' পত্রিকা সেকালের বাঙালি বিদগ্ধ পাঠকসমাজে বেশ আগ্রহের সঙ্গে স্থান করে নিতে পেরেছিল ৷ দেশের স্বাধীনতাকালে ত্রিপুরা স্বাধীন রাজ্য ছিল ৷ এই সময়ে বেশ কয়েকটি সাময়িকপত্র ত্রিপুরা থেকে প্রকাশিত হয়েছিল ৷ পরবর্তী সময়ে অসংখ্য সাময়িকপত্র ও লিটল ম্যাগাজিন ত্রিপুরার সাহিত্যকে পুষ্ট করে আসছে ৷ ত্রিপুরা রাজ্যের ভারতভুক্তির পরবর্তী সময় থেকে আজ পর্যন্ত গান্ধার, জোনাকি, নান্দীমুখ, সৈকত, অগ্রণী,গ্রুপ সেঞ্চুরি, বাংলা কবিতা, ভাষা সাহিত্য, জলজ, স্রোত ইত্যাদি প্রতিনিধিস্থানীয় লিটল ম্যাগাজিনগুলো সময়ে আন্দোলন সৃষ্টি করে চলেছে ৷
' জাতস্য হি ধ্রুবো মৃত্যুঃ
' বলে একটা চিরন্তন প্রবাদ রয়েছে ৷ লিটল ম্যাগাজিনের ক্ষেত্রেও যেন এ কথাটি অক্ষরে অক্ষরে সত্য ৷ চরিত্রের দিক দিয়ে সে যতোটা দৃঢ় হোক না কেন, আয়ুষ্কালের ক্ষেত্রে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই ৷

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...