ভাঙা মেলা - ভাঙা হাট
.
গতকাল ১৭ ই মে রাতে সাবরুম বৈশাখী মেলার সমাপন।সকালে হাঁটতে হাঁটতে মেলা প্রাঙ্গণে এসে চমকে উঠলাম।একেবারে অন্যরকম দৃশ্য। " মেরা নাম জোকার" বইতে সার্কাস শেষ, কোন দর্শক নেই, খালি তাবু, খালি খালি চেয়ার।চারদিক নীরব।এযেন জীবনেরই একটি ছবি।কত হইচই, কত আনন্দ - বিষাদ,কত যুদ্ধ। একসময় সব শেষ।
আজকের স্মৃতিটি একটু অন্যরকম।ঘরগুলো ফাঁকা, স্টেজ ফাঁকা, কেউ নেই কোথাও তবে চারদিকে ছড়িয়ে আছে গতকালের ফেলে যাওয়া আবর্জনা। আমরা কী যাবার কালে শুধুই আবর্জনা রেখে যাই?
অথচ স্টেজের সামনে যেই এসে দাঁড়িয়েছি ভেসে আসছে গত দশদিনের নানা ছবি।কত শিশুর জীবনে প্রথম ওঠা এই স্টেজে,তার লাজুক পদক্ষেপ, তার বা তাদের মা বাবার সতৃষ্ণ চোখ আমার চোখে ভাসছে।
কত কবির কবিতা উচ্চারণ, মান ভঞ্জন নাটকের প্রথম দৃশ্য - " আগুনের পরশমণি ছোঁয়া ও প্রাণে", কত যুবক যুবতীর নানা উপস্থাপন, চকিত দৃষ্টিপাত দয়িত বা দয়িতার প্রতি,ঘোষক ঘোষিকার মিষ্টি কন্ঠে এই শুরু হতে যাচ্ছে অনুষ্ঠান আমি যেন শুনতে পাচ্ছি।
একজন অভিভাবককে দেখলাম কিছু একটা খুঁজছে। জিজ্ঞেস করলাম কী খুঁজছেন? উনি বললেন তার মেয়েটি নাচতে গিয়ে একটি নূপুর হারিয়ে ফোলেছে।আমি মনে মনে বললাম ও শুধু নূপুর ফেলে যায়নি ও তার জীবনের একটি কবিতা ফেলে গেছে।জীবনের কত কবিতা যে এভাবে ফেলে যাবে কে জানে?
বইয়ের স্টলগুলির মালিক বা কর্মচারি অবিক্রীত বই গোছাতে ব্যস্ত।বইগুলোর যেন খুব অভিমান, যেন বলছে আমাদের তোমার ধরলে বাছলে অথচ নিলে না বাড়িতে? আমাদের যে খুব ইচ্ছে ছিল সাবরুমের নানা বাড়িতে আমাদের ঠাঁই হবে।তবু বলছি আবারও ডেকো আমরা আসব।
স্বজন সমাবেশে কিছু সময়ের জন্য অনেককে পাওয়া,এ এক অন্যরকম আনন্দ! আবার অপেক্ষা - অপেক্ষা দীর্ঘ একবছর।তবু তোমাদের কাছে পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করব।
সংগীত বিদ্যালয় গুলির আবার অনুশীলন, নূতন কিছু উপস্থাপন, কিছু নূতন শিল্পী গড়ে তোলা পুরাতন শিল্পীর মানোন্নয়ন এ চলতেই থাকবে।
এসব ভাবছি সঙ্গের বন্ধুটি বলল কী এত ভাবছিস, চল চা খেয়ে বাড়ি যাই।
আস্তে আস্তে গত কদিনের পড়ে থাকা হাজার হাজার পায়ের দাগ মাড়িয়ে চায়ের দোকানের দিকে পা বাড়ালাম।
.
কবি পরিচিতি : প্রাবন্ধিক ও গদ্যকার দীপক দাস সাব্রুম মহকুমার জনপ্রিয় মানুষ। সাহিত্যের বাইরেও তাঁর দার্শনিক চিন্তাভাবনার জন্য যুব সমাজে তিনি জনপ্রিয়। শিক্ষাদান ও প্রশাসনে এ যাবৎ তাঁর দক্ষতা অনুকরনযোগ্য। তাঁর লেখায় জীবনের চাপা পড়া সত্যিগুলো খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠে। আকস্মিক তৃপ্তি বলে কিছু থেকে থাকে তা দীপক দাসের আবিস্কার।
No comments:
Post a Comment